নিয়াজ মাহমুদ ঘটনাচক্রে বিরোধী দলের নেতার আসনে বসা। হঠাৎ করেই দলের ক্ষমতার কেন্দ্রে আসেন। রাজনীতি থেকে অনেকটাই আড়ালে থাকা রওশন এরশাদের নবরূপে...
নিয়াজ মাহমুদ
ঘটনাচক্রে বিরোধী দলের নেতার আসনে বসা। হঠাৎ করেই দলের ক্ষমতার কেন্দ্রে আসেন। রাজনীতি থেকে অনেকটাই আড়ালে থাকা রওশন এরশাদের নবরূপে আবির্ভাব নিয়ে আলোচনা ছিল সর্বত্র। আলোচনা ছিল অপ্রত্যাশিত এক বিরোধী দলকে ঘিরে। ৫ই জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর সাত মাসেরও বেশি সময় পার হয়েছে। এ সময়ে কেমন করেছে বিরোধী দল। কেমনইবা বিরোধী নেতার পারফরমেন্স। এমন আলোচনা খোদ জাতীয় পার্টির মধ্যেই। দলীয় সূত্র বলছে, হঠাৎই ক্ষমতার কেন্দ্রে আসা রওশন এরশাদের সামনে এখন নানামুখী সঙ্কট। দল আর পদ নিয়ে অনেকটা বেকায়দায় তিনি। গত সাত মাসে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে নিজের অবস্থান জানান দিতে সক্ষম হননি। এ নিয়ে হতাশ দলের নেতাকর্মীরাই। তাই বিরোধী দলের নেতার পদ নিয়ে দলেও ভিন্ন চিন্তা করছে একটি পক্ষ। এরই মধ্যে উপনেতার পদ নিয়ে শুরু হয়েছে দেন-দরবার। রওশন নিজের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কাজী ফিরোজ রশীদকে এ পদে বসানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু তা মনঃপূত হয়নি দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের। তিনি চাইছেন তার ঘনিষ্ঠ একজনকে এ পদে বসাতে। এ নিয়ে দুই নেতার দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্য। একই সঙ্গে সরকারে অংশ নেয়া ও বিরোধী দলে অবস্থান করাকে শুরু থেকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন দলের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে প্রেসিডিয়াম সদস্য জি এম কাদের প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন। সম্প্রতি এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে দলে। একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এরশাদ দলের মন্ত্রীদের প্রয়োজনে পদত্যাগ করতে হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন। তার এ বক্তব্য প্রচারের পর উল্টো প্রতিক্রিয়া আসে দলীয় মন্ত্রীদের কাছ থেকে। তারা উল্টো এরশাদকে আগে পদ ছাড়ার কথা বলছেন। এ যখন অবস্থা তখন বিরোধী দলের নেতার অবস্থান কি? কোথাও নেই তিনি। কি দল, কি সংসদে বিরোধী নেতা শুধু রুটিন কাজেই সীমাবদ্ধ। রওশন এরশাদের ব্যক্তিগত কর্মচারী ও ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে নামাজ আদায় করেন তিনি। ওজিফা পড়েন। এরপর ১ ঘণ্টা হাঁটেন। ছেলে সাদ এরশাদ ঢাকায় অবস্থান করলে তার সঙ্গেই থাকেন। সংসদ অধিবেশন থাকলে অধিবেশন শুরুর আধঘণ্টা আগে বাসা থেকে বের হন। রোববার ও বুধবারসহ সপ্তাহে তিন দিন নিয়মিত সংসদে যান তিনি। দিনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত, আর সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ। তবে বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার পর এরশাদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তার। প্রেস ব্রিফিংসহ হাতেগোনা কয়েকটি অনুষ্ঠানে তাকে দেখা গেছে এ পর্যন্ত। সচেতনভাবে মিডিয়া এড়িয়ে চলেন তিনি। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে নানা গুঞ্জন। পাশাপাশি মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পর এরশাদের সঙ্গে বাবলুর সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। সময়ের প্রয়োজনে যারা এক সময় রওশনকে বিরোধী নেতার আসনে বসিয়েছেন তারাই এখন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা করতে তৎপরতা শুরু করেছেন বলেও আলোচনা আছে। জাপার একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বিরোধীদলীয় উপনেতার পদে দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে আনার প্রক্রিয়া চলছে। সংসদীয় কমিটির বৈঠক ডেকে স্পিকারকে এ সংক্রান্ত চিঠি দিতে পারেন এরশাদ। এ বিষয়ে বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ বলেন, আমিও বিষয়টি শুনেছি। তবে এর ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করিনি। এ প্রসঙ্গে বাবলু বলেন, আমার উপনেতা হওয়ার কোন আগ্রহ নেই। এ বিষয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ আমার নাম স্পিকারের কাছে পাঠিয়েছিলেন। এতে বাধা দিচ্ছেন বাবলু। তিনি উপনেতা হতে চান। ওদিকে, রওশনকে নিয়েও আছে দলের ভেতরে-বাইরে নানা আলোচনা। সংসদীয় দলের অনুমোদন ছাড়া দলীয় উপনেতা মনোনীত করে স্পিকারকে চিঠি দিয়ে তিনিও বেকায়দায়। এদিকে, দশম সংসদ সাত মাস অতিক্রম করলেও বিরোধী নেতার দায়িত্ব পেলেও প্রটৌকল অনুযায়ী ঢাকাস্থ বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে রুটিন বৈঠকও করতে পারছেন না। বিরোধীদলীয় নেতার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ মানবজমিনকে বলেন, ফুমিও কিশিদা ও আয়াদ আমিন মাদানি বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে দেখা না করলেও যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যালান ডানকান ও চীনের দু’টি প্রতিনিধি দল তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। এছাড়া গত ১৬ই জানুয়ারি বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ এবং গত ১লা এপ্রিল বৃটিশ আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এলান ডানকান বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সর্বশেষ গত ২৭শে জুন তার সঙ্গে দেখা করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তবে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এবং ওআইসির মহাসচিব আয়াদ আমিন মাদানি সমপ্রতি ঢাকা সফরে এলেও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে তাদের কোন সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়নি।
COMMENTS