Powered by Blogger.

ঈদ-পরবর্তী বিএনপির আন্দোলন এবং সরকারের কৌশল

নাবিল ফারহান রাজনীতিতে এখন চলছে রমজান ভ্যাকেশন। ইফতার পার্টির মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার কর্মসূচীও শেষ। বিএনপি চেয়ারপার্সন ওমরাহ ...

নাবিল ফারহান




রাজনীতিতে এখন চলছে রমজান ভ্যাকেশন। ইফতার পার্টির মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার কর্মসূচীও শেষ। বিএনপি চেয়ারপার্সন ওমরাহ করতে গেছেন সৌদি আরব। আর প্রধানমন্ত্রী আছেন লন্ডন সফরে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে সংসদের বাইরের বিরোধী দল কার্যত কর্মসূচিবিহীন রয়েছে। সংসদের ভেতরের বিরোধী দল এখন আত্মপরিচয়ের সঙ্কটে রয়েছে। না বিরোধী দল, না সরকারি দল। এর মধ্যে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সংসদে দাঁড়িয়ে কাতরস্বরে বলেছেন তাদের নিয়ে যেন ঠাট্টামশকারা না করা হয়। বাস্তবতা হচ্ছে এরশাদের জাতীয় পার্টি এখন বাংলাদেশের রাজনীতির রসালো উপাদান ছাড়া আর কিছু নয়।

বিএনপি চেয়ারপার্সন ঈদের পর আন্দোলনের যে ঘোষনা দিয়েছেন তা নিয়ে এখন চলছে জল্পনা কল্পনা। সৌদি আরব যাওয়ার আগে তিনি ঢাকা মহানগন বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষনা করে গেছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে সভাপতি করে ৫৩ সদস্যর এই কমিটিতে দলের ভেতরে সব মতের নেতাদেরকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কমিটি গঠনের পর মহানগরের নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বেগম খালেদা জিয়া ঘোষণা দিয়েছিলেন দল গোছানোর পর আন্দোলন শুরু করবেন। এই কমিটি গঠনের মধ্যদিয়ে তিনি স্পষ্ট করলেন তার ঘোষনার বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা আছে। ঢাকা মহানগরীতে আন্দোলন ছাড়া যে সাফল্য আসবে না তাও তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন। নির্বাচনের আগে রাজধানীর বাইরে আন্দোলনের যে তীব্রতা ছিল, ঢাকায় তার কোনো প্রতিফলন ছিল না। বিএনপির বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় নেতা তখন আত্মগোপনে চলে গিয়েছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে আন্দোলন গড়ে তুলতে দলের মধ্যে তরুণ ও সাহসী নেতৃত্বের অনেক বেশি প্রয়োজন। ধীরে হলেও সে কাজটি বিএনপি এখন সে কাজটি করতে চেষ্টা করছে। তবে খুব সহজ নয়। কারন বিএনপির সব নেতাদের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। যে কোনো সময় যে কাউকে সরকার কারাগারে নিতে পারে। এ কারনে বিএনপির নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে হতে হচ্ছে যথেষ্ট কৌশলী।

বিএনপি নেতারা বলছেন আগের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আন্দোলনের কৌশল নির্ধারন করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দলের সব ধরনের অঙ্গ সংগঠন গুলোকে সক্রিয়ভাবে মাঠে নামানো হবে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বিদেশ থেকে দলের নেতা কর্মীদের সক্রিয় করার কাজ করেছেন। যতটা সম্ভব তিনি তৃনমুল নেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষার চেষ্টা করছেন। সৌদি আরবে দীর্ঘদিন পর মা ও ছেলের সাথে দেখা হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আন্দোলনের কৌশল নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। সেখানে ২০ দলীয় জোটের কয়েকজন তরুন নেতার সাথে তিনি কথা বলেছেন। দলের ও জোটের ভেতরের অবস্থা জানার ও বোঝার চেষ্টা করেছেন। বিএনপির সূত্রগুলো বলছে আগামি দিনে সরকার বিরোধী আন্দোলনে দল ও জোটের মধ্যে সমন্বয় সাধন কিভাবে হবে সে বিষয়টির ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

নেতাদের সামনে একটি বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে সরকারকে যতবেশি সময় দেয়া হবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আরো বাড়বে। সরকার আরো শক্তভাবে জেকে বসবে।
বিএনপির টার্গেট এ বছরের মধ্যে আরেকটি নির্বাচন নিশ্চিত করা। তা করতে হলে ঈদের পর থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে হবে। এ ছাড়া সরকার বিএনপি চেয়ারপারসনসহ নেতাদের বিরুদ্ধে যেভাবে মামলা দিয়ে তাদের গ্রেফতারের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে তাতে ঈদের পর আন্দোলন শুরু করা ছাড়া বিকল্প নেই। অপর দিকে ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক জামায়াতে ইসলামীও নীরবে দল গুছিয়ে আন্দোলনের নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। যথেষ্ট গোপনীয়তার সাথে বিএনপির সাথে রাখা হচ্ছে নিবিড় যোগাযোগ। ফলে ঈদের পর রাজনীতির মাঠ যে উত্তপ্ত হয়ে উঠবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়।

বিরোধী দল যখন ঈদের পর আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে তখন ক্ষমতাসীন দলে প্রশাসননির্ভরতা আরো বেড়ে যাচ্ছে। দলের নেতাকর্মীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ব্যবসায়-বাণিজ্য, লাইসেন্স পারমিট ও আর্থিক সুবিধা আদায়ে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নেতাকর্মীর উপস্থিতি কমে গেছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান দুই দিন নেতাদের বক্তৃতা ছাড়া শেষ করতে হয়েছে। কারণ অনুষ্ঠানে কোনো উপস্থিতি ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর পুত্র এক দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও কর্মীশূন্যতার কারণে তিনি অসেননি। এ ছাড়া সারা দেশে দলের মধ্যে কোন্দল ও হানাহানি বেড়ে গেছে। কার্যত ক্ষমতাসীন দলের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে স্থানীয় পর্যায়ে গডফাদারদের নিয়ন্ত্রণে। এর ফলে কর্মীদের মধ্যে হতাশাও বাড়ছে। শুধু প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে বিরোধী দলের আন্দোলন কতটা মোকাবেলা করা যাবে, তা নিয়ে এখন দলের নেতাকর্মীরা সংশয়ে রয়েছেন।

এ দিকে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি সরকারের অনুকূলে নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন বারবার জানিয়ে দিয়েছে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে তাদের আগের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। অর্থাৎ এই দেশগুলো দ্রুত আরেকটি নির্বাচনের পক্ষে। অপর দিকে ভারতে সরকার পরিবর্তনের পর কংগ্রেসের মতো জোরালো সমর্থন যে বিজেপির কাছ থেকে আসবে না তার ইঙ্গিত ইতোমধ্যে নতুন সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে ভারতীয় সাহায্য কমানো হয়েছে। ভারত এই সরকারকে সমর্থন দেবে কিন্তু কংগ্রেসের মতো শেখ হাসিনা সরকার ছাড়া অন্য কেউ ক্ষমতায় আসুক তা চাই না এমন নীতি দেশটি গ্রহণ করবে না। ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সরকারের জন্য ভারতের এই অবস্থান বড় ধরনের ঝুঁকির কারণ হবে। এছাড়া নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ঢাকায় যোগদানকে কেন্দ্র করে দুদেশের মধ্যে আরেক দফা সর্ম্পকের অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ঢাকায় আসার আগে সরকারের মন্ত্রীরা তাকে বিরুদ্ধে নানা বক্তব্য দিয়ে চলছেন।

তবে সরকারের অবস্থান যত দুর্বলই হোক না কেন আন্তর্জাতিক চাপে বা সীমিত আকারের আন্দোলনে আরেকটি নির্বাচনের ঘোষণা আসবে, এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। ফলে সামনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো বেশি রক্তাক্ত হয়ে উঠতে পারে। সরকার এই আন্দোলন দমনে নতুন কৌশল গ্রহণ করবে। বিএনপি চেয়ারপারসনসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের মামলাগুলো দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপির নেতাদের কারাবন্দী করে নেতৃত্বশূন্য করা হতে পারে। একই সাথে বিএনপিতে ভাঙন ধরানোর চেষ্টাও থাকবে। যদিও এর আগে এমন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। অপর দিকে জোট থেকে বেরিয়ে আসতে জামায়াতের ওপর চাপ বাড়ানো হতে পারে।

তবে ভোটের অধিকারহারা মানুষ নানা কারণে সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ ও হতাশ। এই হতাশার বহিঃপ্রকাশ শুধু রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে ঘটবে এমন নয়। অন্য অনেক ঘটনার মধ্যেদিয়ে বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। যেমন নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনার পর এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। জনগণের আন্দোলনের মুখে র‌্যাবকে দৃশ্যপটের বাইরে রাখতে হয়েছে। অথচ বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনে র‌্যাব ছিল সরকারের প্রধান সহায়ক শক্তি।
এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক শক্তি ও সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরাও এখন সরকারের ওপর হতাশ হয়ে পড়ছেন। নানাভাবে তারা সরকারের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। ফলে সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তির মধে যে বিরোধী অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে, তা আগামী দিনে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নতুন গতি সৃষ্টি করতে পারে।

COMMENTS

Name

Gmail,1,আত্বহত্যা,1,আবিষ্কার,1,ইমেইল,1,ইসলাম,5,এক্সক্লুসিভ,117,এফিডেভিট,1,ঔষধ,1,কবিতা,2,কসম্যাটিক,1,কসম্যাটিক সার্জারি,1,কাজী,1,কাবিন,1,কোর্ট ম্যারেজ,1,গল্প,1,দিটেকজার্নাল,1,প্রচ্ছদ,2,প্রযুক্তি,2,প্রেম,1,বিজ্ঞান-প্রযুক্তি,5,বিনোদন,6,বিবিসি,1,ব্লক সাইট,1,ভিক্ষাবৃত্তি,1,ভিডিও,3,ভ্রমণ,7,মুক্তমত,1,মুক্তিযোদ্ধা,1,রেসিপি,2,লাইফস্টাইল,5,সম্পর্ক,7,সার্জারি,1,সাহিত্য,3,হামদর্দ,1,
ltr
item
blog: ঈদ-পরবর্তী বিএনপির আন্দোলন এবং সরকারের কৌশল
ঈদ-পরবর্তী বিএনপির আন্দোলন এবং সরকারের কৌশল
blog
http://bdview24me.blogspot.com/2014/08/blog-post_30.html
http://bdview24me.blogspot.com/
http://bdview24me.blogspot.com/
http://bdview24me.blogspot.com/2014/08/blog-post_30.html
true
4108433919245401245
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Readmore Reply Cancel reply Delete By Home PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS CONTENT IS PREMIUM Please share to unlock Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy