বীর মুক্তিযোদ্ধা সফর আলী। একাত্তরে তিনি টগবগে তরুণ। দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য সেদিন যে জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মরণপণ সংগ্রামে। স্বাধীন...
বীর মুক্তিযোদ্ধা সফর আলী। একাত্তরে তিনি টগবগে তরুণ। দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য সেদিন যে জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মরণপণ সংগ্রামে। স্বাধীন স্বদেশে সেইসফর আলী বাঁচাতে আজ অপরের করুণা ভিক্ষা করেন। আর বিড় বিড় করে নিজের কাছেই প্রশ্ন করেন- এই কি বিজয়! এই কি স্বাধীনতা? ভিক্ষাবৃত্তিই আমার মুক্তিযুদ্ধের পুরস্কার।
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের মনরাজ গ্রামের টগবগে যুবক সফর আলী ৬৯ এর আন্দোলনমুখর দিনে তৎকালীন মুজাহিদ বাহিনীর চাকরি ছেড়ে নেমে আসেন রাজপথে। রাজপথের মিছিলে কুলাউড়ার জননন্দিত নেতা মরহুম সংসদ সদস্য আব্দুল জব্বারের নেতৃত্বে বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেন।
৭০ এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ শুনে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। বাল্যকালে বাবাহারা সেদিনের এই টগবগে যুবক মৌলভীবাজার-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সৈয়দ মহসীন আলী, কুলাউড়ার প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল জব্বার, জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুল মুমিত আসুক সাহেবের সঙ্গে ৪নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর সিআর দত্তের নেতৃত্বে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
যুদ্ধে যাবার সময় মা, স্ত্রী, কন্যাসহ পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার সময়টুকু পাননি। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অনেক সাথীকে হারিয়ে মাতৃভূমি শত্রুমুক্ত করেছেন। দেশ ও জাতির বিজয় অর্জিত হয়েছে।
বিজয়ের ৪৩ বছর পরও তার অনুভূতি জানতে চাইলে কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বীর মুক্তিযোদ্ধা সফর আলী বিডিভিউটুয়েন্টিফর ডঢকম কে জানান, দেশ স্বাধীনের পরপরই সকল নেতার দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। একটি কাজের আশায় ঘুরেছেন তাদের দ্বারে দ্বারে। তার ভাগ্যে কোনো কাজ জোটেনি। শরীরের শক্তি থাকায় দেশ স্বাধীনের পর তিনি রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। অসুস্থ মা চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেছেন। এখন আর শরীরে শক্তি নেই, স্ত্রী, কন্যা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রায়ই অর্ধাহারে থাকতে হয়।
মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ২ হাজার টাকা ভাতা প্রদান করা হয়। এই ভাতার টাকায় সংসার চলে না, নিজের কোনো বাড়ি ভিটে নেই। শ্বশুড় বাড়ির একখণ্ড ভূমিতে যাযাবরের মতো তাকে দিনাতিপাত করতে হয়।
বর্তমানে তিনি কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের মনসুর গ্রামে বসবাস করছেন। প্রতিনিয়ত মানুষের করুণার পাত্র হয়ে তাকে হাত পাততে হয়। মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মানে সমাহিত করার চেয়ে তাঁর কাছে এ মুহূর্তে নিয়মিত দু’মুঠো খাবার বড় জরুরি। জীবনের শেষ বয়সে অসুস্থ এই বীর মুক্তিযোদ্ধার ডান হাতটি পঁচে পড়ার উপক্রম হয়েছে। সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে তাকে দেখা হয় অবহেলিত চোখে, ওষুধ সরবরাহ করা হয় মাত্র ৩ টাকার।
বিজয়ের ৪৩তম বছর চলছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা সফর আলীর একমাত্র আর্তি একটু স্থান, নিয়মিত দু’মুঠো ভাত ও জীবনের শেষ সময়ে মানুষের কাছে হাত না পেতে একটু শান্তিতে মৃত্যু।
বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় গণতান্ত্রিক সরকার অধিষ্ঠিত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার পরিজনদের পুনর্বাসনের জন্য অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁকে পুনর্বাসনের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী ও এদেশের স্বাধীনতা প্রেমী মানুষদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন।
COMMENTS